জিংক সিরাপ (Xinc syrup) হল একটি ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট, যেটি দেহে জিংকের ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপযোগী হতে পারে, বিশেষ করে যারা সংক্রমণ বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা ভুগছে তাদের জন্য। নিচে জিংক সিরাপের প্রধান কাজগুলো উল্লেখ করা হলো:
জিংক সিরাপ (Xinc syrup) এর কাজ ও উপকারিতা:
-
ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করে
-
শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া হলে জিংক সিরাপ ১০-১৪ দিন খাওয়ানো হয়। এটি ডায়রিয়ার সময়কাল ও তীব্রতা কমায় এবং ভবিষ্যতে ডায়রিয়ার ঝুঁকিও কমায়।
-
-
ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) উন্নত করে
-
জিংক দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে, ফলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহজ হয়।
-
-
ঘা ও ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে
-
জিংক টিস্যু রিজেনারেশন বা ক্ষতস্থানে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।
-
-
বিকাশ ও বৃদ্ধি করে
-
শিশুদের বৃদ্ধিতে জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে।
-
-
ত্বক, চুল ও নখ ভালো রাখতে সাহায্য করে
-
জিংকের ঘাটতি ত্বকে ব্রণ, চুল পড়া, নখ ভঙ্গুর হওয়ার কারণ হতে পারে।
-
-
রুচি ও গন্ধ অনুভবের ক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে
-
জিংকের অভাবে খাবারে রুচি কমে যেতে পারে, যা সিরাপ খাওয়ার মাধ্যমে উন্নত হয়।
-
জিংক সিরাপ ব্যবহারের সময়সীমা:
-
ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত ১০-১৪ দিন খাওয়ানো হয়।
-
দৈনিক মাত্রা বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। শিশুর জন্য সাধারণত ৫ মি.লি./দিন (বা ডাক্তার যা নির্ধারণ করেন) দেওয়া হয়।
জিংক সিরাপ (Xinc syrup) এর সেবনবিধি
-
খাবারের পর খাওয়ানো ভালো (খালি পেটে দিলে কিছু ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা হতে পারে)।
-
সিরাপ ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
-
মাপার চামচ/সিরাপ কাপ দিয়ে সঠিক মাত্রায় দিতে হবে।
-
সরাসরি বোতল থেকে খাওয়ানো যাবে না।
-
শিশুদের মুখে দেওয়ার পরে কিছু পানি খাওয়ানো যেতে পারে যেন স্বাদ দূর হয়।
ডায়রিয়া রোগে জিংক সিরাপের মাত্রা:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফের গাইডলাইন অনুযায়ী:
বয়স | দৈনিক মাত্রা | খাওয়ানোর সময়কাল |
---|---|---|
৬ মাস–৫ বছর | ২০ মি.লি. (১০ মি.লি. করে ২ বার, বা একবারে ২০ মি.লি.) | ১০–১৪ দিন |
২–৬ মাস | ১০ মি.লি. দিনে একবার | ১০–১৪ দিন |
জিংক সিরাপ (Xinc syrup) সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (স্বল্পমাত্রায়):
- পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা
- বমি বা বমি বমি ভাব
- ডায়রিয়া বা হালকা পাতলা পায়খানা
- গ্যাস্ট্রিক বা পেটে গ্যাস হওয়া
- রুচি হ্রাস পেতে পারে সাময়িকভাবে
জিংক সিরাপ (Xinc syrup) এর দাম
ব্র্যান্ড নাম | পরিমাণ | দাম (টাকা) | উৎস |
---|---|---|---|
Xinc | ১০০ মি.লি. | ৳৫০.০০ | MedEx |
Xinc-B | ১০০ মি.লি. | ৳৬১.১০ | ePharma |
Biozinc | ১০০ মি.লি. | ৳৩৫.০০ | MedEx |
Zinc-R | ১০০ মি.লি. | ৳২৫.১০ | MedEx |
Zinca | ১০০ মি.লি. | ৳৩৫.০০ | MedEx |
কেন দাম ভিন্ন হতে পারে?
-
ব্র্যান্ডের পার্থক্য: বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত সিরাপের দাম ভিন্ন হতে পারে।
-
উপাদান ও গুণগত মান: কিছু সিরাপে অতিরিক্ত ভিটামিন বা উপাদান থাকতে পারে, যা দাম বাড়াতে পারে।
-
বিক্রেতার নীতি: অনলাইন ফার্মেসি ও স্থানীয় ফার্মেসির মধ্যে দাম পার্থক্য থাকতে পারে।
জিংক সিরাপের প্রতিনির্দেশনা (Contraindications):
-
জিংকে অ্যালার্জি থাকলে (Hypersensitivity to zinc):
-
যদি কেউ জিংক বা সিরাপের অন্য কোনো উপাদানে অ্যালার্জিক হয়, তবে এটি খাওয়া উচিত নয়।
-
লক্ষণ: ত্বকে র্যাশ, ফোলাভাব, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
-
-
কিডনির জটিল রোগে:
-
দীর্ঘমেয়াদী বা তীব্র কিডনি রোগে (Chronic Kidney Disease) জিংকের অতিরিক্ত সঞ্চয় হতে পারে, যা ঝুঁকিপূর্ণ।
-
চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া এই অবস্থায় জিংক খাওয়া যাবে না।
-
-
কপার (Copper) ঘাটতির রোগীদের ক্ষেত্রে:
-
দীর্ঘদিন জিংক গ্রহণ করলে শরীরে কপার শোষণে সমস্যা হয়। যদি কারও শরীরে কপারের অভাব থাকে, তাহলে জিংক সিরাপ পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
-
-
একইসাথে উচ্চমাত্রার আয়রন ও ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলে:
-
জিংক, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম একসাথে খাওয়া হলে একে অপরের শোষণে বাঁধা দিতে পারে। তাই এগুলো আলাদা সময়ে খাওয়া উচিত।
-
-
গ্যাস্ট্রিক বা পাকস্থলীর অতিসংবেদনশীলতা থাকলে:
-
কিছু রোগীর জিংক খাওয়ার পরে গ্যাস্ট্রিক, পেটে ব্যথা বা বমিভাব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে খাওয়ার পরে খেলে ঝুঁকি কমে।
-
স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে:
কেন প্রয়োজন হতে পারে:
-
বুকের দুধের মাধ্যমে শিশু জিংক পায়। মায়ের শরীরে জিংকের ঘাটতি থাকলে শিশুরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
-
স্তন্যদানকালে জিংকের চাহিদা আরও বেড়ে যায় (প্রায় ১২–১৩ মি.গ্রা./দিন)।
কেন সাবধানতা দরকার:
-
অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ করলে দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে অপ্রয়োজনীয় মাত্রা পৌঁছাতে পারে, যা হজমে সমস্যা বা বমি সৃষ্টি করতে পারে।
-
মায়ের শরীরে কপার ঘাটতি হতে পারে, যা রক্তাল্পতা ও স্নায়বিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সতর্কতা:
-
অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না, এতে বমি, গ্যাস্ট্রিক বা কপার ঘাটতি হতে পারে।
-
একসাথে আয়রন বা ক্যালসিয়ামের সাথে খেলে জিংকের শোষণে সমস্যা হতে পারে, তাই আলাদা সময়ে খাওয়ানো ভালো।
-
অ্যালার্জি লক্ষণ দেখা দিলে (ত্বকে র্যাশ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) বন্ধ করে ডাক্তার দেখাতে হবে।
সম্পর্কিত বিষয়: Tofen Syrup (টোফেন সিরাপ) এর কাজ কি ?