জিংক সিরাপ (Xinc syrup) এর কাজ, সেবনবিধি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও দাম

Xinc syrup জিংক সিরাপ

জিংক সিরাপ (Xinc syrup) হল একটি ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট, যেটি দেহে জিংকের ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপযোগী হতে পারে, বিশেষ করে যারা সংক্রমণ বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা ভুগছে তাদের জন্য। নিচে জিংক সিরাপের প্রধান কাজগুলো উল্লেখ করা হলো:

জিংক সিরাপ (Xinc syrup)

জিংক সিরাপ (Xinc syrup) এর কাজ ও উপকারিতা:

  1. ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করে

    • শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া হলে জিংক সিরাপ ১০-১৪ দিন খাওয়ানো হয়। এটি ডায়রিয়ার সময়কাল ও তীব্রতা কমায় এবং ভবিষ্যতে ডায়রিয়ার ঝুঁকিও কমায়।

  2. ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) উন্নত করে

    • জিংক দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে, ফলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহজ হয়।

  3. ঘা ও ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে

    • জিংক টিস্যু রিজেনারেশন বা ক্ষতস্থানে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।

  4. বিকাশ ও বৃদ্ধি করে

    • শিশুদের বৃদ্ধিতে জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে।

  5. ত্বক, চুল ও নখ ভালো রাখতে সাহায্য করে

    • জিংকের ঘাটতি ত্বকে ব্রণ, চুল পড়া, নখ ভঙ্গুর হওয়ার কারণ হতে পারে।

  6. রুচি ও গন্ধ অনুভবের ক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে

    • জিংকের অভাবে খাবারে রুচি কমে যেতে পারে, যা সিরাপ খাওয়ার মাধ্যমে উন্নত হয়।

জিংক সিরাপ ব্যবহারের সময়সীমা:

  • ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত ১০-১৪ দিন খাওয়ানো হয়।

  • দৈনিক মাত্রা বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। শিশুর জন্য সাধারণত ৫ মি.লি./দিন (বা ডাক্তার যা নির্ধারণ করেন) দেওয়া হয়।

জিংক সিরাপ (Xinc syrup) এর সেবনবিধি

  • খাবারের পর খাওয়ানো ভালো (খালি পেটে দিলে কিছু ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা হতে পারে)।

  • সিরাপ ব্যবহারের আগে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।

  • মাপার চামচ/সিরাপ কাপ দিয়ে সঠিক মাত্রায় দিতে হবে।

  • সরাসরি বোতল থেকে খাওয়ানো যাবে না

  • শিশুদের মুখে দেওয়ার পরে কিছু পানি খাওয়ানো যেতে পারে যেন স্বাদ দূর হয়।

ডায়রিয়া রোগে জিংক সিরাপের মাত্রা:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফের গাইডলাইন অনুযায়ী:

বয়স দৈনিক মাত্রা খাওয়ানোর সময়কাল
৬ মাস–৫ বছর ২০ মি.লি. (১০ মি.লি. করে ২ বার, বা একবারে ২০ মি.লি.) ১০–১৪ দিন
২–৬ মাস ১০ মি.লি. দিনে একবার ১০–১৪ দিন

জিংক সিরাপ (Xinc syrup) সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (স্বল্পমাত্রায়):

  • পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা
  • বমি বা বমি বমি ভাব
  • ডায়রিয়া বা হালকা পাতলা পায়খানা
  • গ্যাস্ট্রিক বা পেটে গ্যাস হওয়া
  • রুচি হ্রাস পেতে পারে সাময়িকভাবে

জিংক সিরাপ (Xinc syrup) এর দাম

ব্র্যান্ড নাম পরিমাণ দাম (টাকা) উৎস
Xinc ১০০ মি.লি. ৳৫০.০০ MedEx
Xinc-B ১০০ মি.লি. ৳৬১.১০ ePharma
Biozinc ১০০ মি.লি. ৳৩৫.০০ MedEx
Zinc-R ১০০ মি.লি. ৳২৫.১০ MedEx
Zinca ১০০ মি.লি. ৳৩৫.০০ MedEx

কেন দাম ভিন্ন হতে পারে?

  • ব্র্যান্ডের পার্থক্য: বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত সিরাপের দাম ভিন্ন হতে পারে।

  • উপাদান ও গুণগত মান: কিছু সিরাপে অতিরিক্ত ভিটামিন বা উপাদান থাকতে পারে, যা দাম বাড়াতে পারে।

  • বিক্রেতার নীতি: অনলাইন ফার্মেসি ও স্থানীয় ফার্মেসির মধ্যে দাম পার্থক্য থাকতে পারে।

জিংক সিরাপের প্রতিনির্দেশনা (Contraindications):

  1. জিংকে অ্যালার্জি থাকলে (Hypersensitivity to zinc):

    • যদি কেউ জিংক বা সিরাপের অন্য কোনো উপাদানে অ্যালার্জিক হয়, তবে এটি খাওয়া উচিত নয়।

    • লক্ষণ: ত্বকে র‍্যাশ, ফোলাভাব, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।

  2. কিডনির জটিল রোগে:

    • দীর্ঘমেয়াদী বা তীব্র কিডনি রোগে (Chronic Kidney Disease) জিংকের অতিরিক্ত সঞ্চয় হতে পারে, যা ঝুঁকিপূর্ণ।

    • চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া এই অবস্থায় জিংক খাওয়া যাবে না।

  3. কপার (Copper) ঘাটতির রোগীদের ক্ষেত্রে:

    • দীর্ঘদিন জিংক গ্রহণ করলে শরীরে কপার শোষণে সমস্যা হয়। যদি কারও শরীরে কপারের অভাব থাকে, তাহলে জিংক সিরাপ পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।

  4. একইসাথে উচ্চমাত্রার আয়রন ও ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলে:

    • জিংক, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম একসাথে খাওয়া হলে একে অপরের শোষণে বাঁধা দিতে পারে। তাই এগুলো আলাদা সময়ে খাওয়া উচিত।

  5. গ্যাস্ট্রিক বা পাকস্থলীর অতিসংবেদনশীলতা থাকলে:

    • কিছু রোগীর জিংক খাওয়ার পরে গ্যাস্ট্রিক, পেটে ব্যথা বা বমিভাব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে খাওয়ার পরে খেলে ঝুঁকি কমে।

স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে:

কেন প্রয়োজন হতে পারে:

  • বুকের দুধের মাধ্যমে শিশু জিংক পায়। মায়ের শরীরে জিংকের ঘাটতি থাকলে শিশুরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

  • স্তন্যদানকালে জিংকের চাহিদা আরও বেড়ে যায় (প্রায় ১২–১৩ মি.গ্রা./দিন)।

কেন সাবধানতা দরকার:

  • অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ করলে দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে অপ্রয়োজনীয় মাত্রা পৌঁছাতে পারে, যা হজমে সমস্যা বা বমি সৃষ্টি করতে পারে।

  • মায়ের শরীরে কপার ঘাটতি হতে পারে, যা রক্তাল্পতা ও স্নায়বিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সতর্কতা:

  • অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না, এতে বমি, গ্যাস্ট্রিক বা কপার ঘাটতি হতে পারে।

  • একসাথে আয়রন বা ক্যালসিয়ামের সাথে খেলে জিংকের শোষণে সমস্যা হতে পারে, তাই আলাদা সময়ে খাওয়ানো ভালো।

  • অ্যালার্জি লক্ষণ দেখা দিলে (ত্বকে র‍্যাশ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) বন্ধ করে ডাক্তার দেখাতে হবে।

 

সম্পর্কিত বিষয়: Tofen Syrup (টোফেন সিরাপ) এর কাজ কি ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *